চুল পড়ার কারণ কী, আর কেন এটা এত চিন্তার বিষয়?

আসলে, চুল পড়ার পেছনে অনেক কারণ লুকিয়ে আছে, যা আমরা হয়তো অনেক সময় খেয়ালও করি না। আমার নিজের কথাই বলি, একসময় ভাবতাম শুধু বয়সের কারণেই বোধহয় চুল পড়ে, কিন্তু পরে দেখলাম ব্যাপারটা আরও জটিল। এখনকার যুগে পরিবেশ দূষণ, খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম, আর স্ট্রেস—এই তিনটি বিষয় চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা প্রতিদিন যে ধুলো-ময়লার মধ্য দিয়ে হাঁটি, তা চুলের গোড়ায় জমে যায় আর স্ক্যাল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও, ফাস্ট ফুড বা প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়ার ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব হয়, যা সরাসরি চুলের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। আর আধুনিক জীবনের এই দৌড়াদৌড়িতে স্ট্রেস তো এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শুধু মনকেই নয়, আমাদের চুলকেও দুর্বল করে তোলে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যখন অফিসের কাজের চাপ বেশি থাকত, তখন চুল পড়ার পরিমাণও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত। শুধু তাই নয়, অনেক সময় বংশগত কারণেও চুল পড়ে। আপনার বাবা বা দাদার যদি টাক থাকে, তাহলে আপনারও সেই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হরমোনের পরিবর্তন, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ডেরিভেটিভ ডিহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) যখন বেশি সক্রিয় হয়, তখন ফলিকলগুলো সংকুচিত হয়ে চুল পাতলা হতে শুরু করে এবং একসময় ঝরে পড়ে। আবার কিছু নির্দিষ্ট রোগের কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে, যেমন থাইরয়েডের সমস্যা বা অ্যানিমিয়া। তাই চুল পড়ার সঠিক কারণটা জানা খুব জরুরি, কারণ কারণের ওপর নির্ভর করেই সঠিক সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব।
পরিবেশ দূষণ এবং চুলের ওপর এর প্রভাব
আমরা প্রায়শই খেয়াল করি না যে আমাদের চারপাশের দূষিত বাতাস, ধুলোবালি আর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের চুলের কতটা ক্ষতি করছে। এই দূষক পদার্থগুলো চুলের গোড়ায় জমে ফলিকলগুলোকে ব্লক করে দেয়, যার ফলে চুল পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় না। ফলস্বরূপ, চুল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজে ঝরে যায়। আমার মনে আছে একবার ছুটির দিনে বাইরে ঘুরতে গিয়ে টানা কয়েকদিন ধুলাবালির মধ্যে ছিলাম, তারপর বাসায় ফিরে দেখি শ্যাম্পু করার সময় সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি চুল উঠছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝেছি পরিবেশের প্রভাব চুলের উপর কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
স্ট্রেস ও খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা
কর্মজীবনের চাপ, পারিবারিক সমস্যা বা ব্যক্তিগত কোনো দুশ্চিন্তা—যেকোনো কিছুই মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। এই স্ট্রেস আমাদের হরমোনকে প্রভাবিত করে, যা চুলের বৃদ্ধিচক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে শরীর যখন প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল আর প্রোটিন পায় না, তখন চুল দুর্বল হয়ে পড়ে। ভিটামিন ডি, আয়রন, জিঙ্ক আর বায়োটিনের মতো পুষ্টি উপাদান চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমি নিজে যখন সময়মতো সুষম খাবার খাওয়া শুরু করলাম আর মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন করতাম, তখন ধীরে ধীরে চুল পড়ার হারও কমতে শুরু করলো।
সঠিক অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু কীভাবে চিনে নেবেন?
বাজারে আজকাল হাজারো ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু পাওয়া যায়, আর প্রতিটি ব্র্যান্ডই দাবি করে যে তাদের পণ্য চুল পড়া কমাবে। কিন্তু সব শ্যাম্পু কি সত্যিই কাজ করে?
অবশ্যই না! আমি নিজে অনেক শ্যাম্পু ব্যবহার করে হতাশ হয়েছি। আসল কথা হলো, সঠিক শ্যাম্পু চেনার জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়। প্রথমত, শ্যাম্পুতে কী কী উপাদান আছে তা ভালোভাবে দেখতে হবে। ক্যাফেইন, বায়োটিন, কেটোকোনাজল, স পামেট্টো (Saw Palmetto), আর মিনারেল ব্লকার (যেমন জিঙ্ক পাইরিথিওন) – এই উপাদানগুলো চুল পড়া কমাতে এবং চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। এই উপাদানগুলো চুলের ফলিকলকে উদ্দীপিত করে এবং DHT হরমোনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। আমার দেখা মতে, যেসব শ্যাম্পুতে এই উপাদানগুলো সঠিক মাত্রায় থাকে, সেগুলোই বেশি কার্যকর হয়। দ্বিতীয়ত, শ্যাম্পুটি আপনার চুলের ধরন এবং স্ক্যাল্পের প্রকৃতির সাথে মানানসই কিনা তা যাচাই করা জরুরি। যাদের তৈলাক্ত স্ক্যাল্প, তাদের জন্য এক ধরনের শ্যাম্পু আর যাদের শুষ্ক স্ক্যাল্প, তাদের জন্য অন্য ধরনের শ্যাম্পু প্রয়োজন হতে পারে। ভুল শ্যাম্পু ব্যবহার করলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হতে পারে। তাই কেনার আগে একটু সময় নিয়ে শ্যাম্পুর উপাদান তালিকা আর রিভিউগুলো দেখে নিলে ভালো হয়।
উপাদান তালিকা: আপনার শ্যাম্পুতে কী থাকা জরুরি?
সঠিক অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পুর প্রধান বৈশিষ্ট্যই হলো এর কার্যকারী উপাদানগুলো। কিছু উপাদান সরাসরি চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে, আবার কিছু উপাদান স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। যেমন, ক্যাফেইন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে, বায়োটিন চুলের প্রোটিন কেরাটিনের উৎপাদনে সাহায্য করে, আর স পামেট্টো DHT হরমোনের প্রভাব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি সব সময় এমন শ্যাম্পু বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি যেখানে এই ধরনের প্রাকৃতিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপাদান থাকে। এটা শুধু আমার চুল পড়া কমাতেই নয়, নতুন চুল গজাতেও বেশ সাহায্য করেছে।
আপনার চুলের ধরন এবং শ্যাম্পুর সামঞ্জস্য
আমরা সবাই জানি, সবার চুল এক রকম হয় না। কারো চুল তৈলাক্ত, কারো শুষ্ক, আবার কারো সাধারণ। শ্যাম্পু কেনার সময় অবশ্যই আপনার চুলের ধরন বিবেচনা করা উচিত। একটি তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের জন্য তৈরি শ্যাম্পু একটি শুষ্ক স্ক্যাল্পে ব্যবহার করলে সমস্যা হতে পারে, যেমন চুল আরও শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। আমার ক্ষেত্রে, যেহেতু আমার স্ক্যাল্প কিছুটা তৈলাক্ত, তাই আমি এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করি যা অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং একই সাথে চুল পড়া কমায়। এতে আমার চুল সতেজ থাকে এবং চুল পড়ার সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে সেরা কিছু পুরুষদের অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু
এতদিন ধরে বিভিন্ন শ্যাম্পু ব্যবহার করে এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা শুনে আমি কিছু শ্যাম্পুর একটা তালিকা তৈরি করেছি, যা পুরুষদের চুল পড়া কমাতে সত্যিই সাহায্য করে। এইগুলো এমন শ্যাম্পু যা আমি নিজে ব্যবহার করে অথবা আমার পরিচিতরা ব্যবহার করে ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছে। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো শ্যাম্পুই ম্যাজিকের মতো রাতারাতি কাজ করবে না। ধৈর্য ধরে নিয়মিত ব্যবহার করলে তবেই ভালো ফল পাওয়া যায়। আমি যখন প্রথম চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম, তখন অনেকেই আমাকে বিভিন্ন শ্যাম্পুর নাম বলত, কিন্তু কোনটা যে আসলেই কাজ করবে তা নিয়ে একটা সংশয় ছিল। নিজেই অনেক গবেষণা করে আর ব্যবহার করে দেখেছি, কিছু শ্যাম্পু সত্যিই দারুণ কাজ করে। যেমন, Nizoral A-D Anti-Dandruff Shampoo, যদিও এটি মূলত খুশকির জন্য, কিন্তু এর মূল উপাদান কেটোকোনাজল চুল পড়া কমাতেও দারুণ কার্যকরী। আবার, The Man Company Anti Hair Fall Shampoo-তেও আছে অনিয়ন অয়েল ও ক্যাফেইন, যা চুলের গোড়া শক্ত করে। Mamaearth Onion Hair Fall Control Shampoo-ও অনেকে ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছেন, কারণ এতে পেঁয়াজের নির্যাস ও রেডনসিলের মতো উপাদান আছে। এই শ্যাম্পুগুলো ব্যবহার করার সময় আমার চুল আগের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত মনে হয়েছে, আর চিরুনিতে চুল জমার পরিমাণও কমে গেছে।
Nizoral A-D: শুধু খুশকি নয়, চুল পড়া কমাতেও কার্যকর!
Nizoral A-D অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু মূলত খুশকির জন্য পরিচিত হলেও, এর প্রধান সক্রিয় উপাদান কেটোকোনাজল চুল পড়া কমাতেও বিস্ময়কর কাজ করে। এই উপাদানটি স্ক্যাল্পের প্রদাহ কমিয়ে এবং ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে চুল পড়া প্রতিরোধ করে। আমার পরিচিত একজন এটি নিয়মিত ব্যবহার করে খুশকির পাশাপাশি চুল পড়া কমাতেও বেশ ভালো ফল পেয়েছে। এটি ব্যবহার করার পর তার চুল আরও ঘন এবং স্বাস্থ্যবান মনে হয়েছে।
Mamaearth Onion Hair Fall Control Shampoo: প্রকৃতির ছোঁয়ায় চুলের যত্ন
Mamaearth এর এই শ্যাম্পুটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি, বিশেষ করে পেঁয়াজের নির্যাস এবং রেডনসিল (Redensyl) এর প্রধান উপাদান। পেঁয়াজ চুলের ফলিকলকে পুষ্টি জোগায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। রেডনসিল একটি বায়োটেকনোলজিক্যাল উপাদান যা চুলের বৃদ্ধিচক্রকে উদ্দীপিত করে। আমি নিজে এই শ্যাম্পুটি ব্যবহার করে দেখেছি, এটি চুলকে নরম রাখে এবং একটা প্রাকৃতিক জেল্লা দেয়। সবচেয়ে বড় কথা, কিছুদিন ব্যবহার করার পর সত্যিই মনে হয়েছে চুল পড়ার পরিমাণ কমেছে।
শ্যাম্পু ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ও কিছু জরুরি টিপস
শুধু ভালো শ্যাম্পু কিনলেই হবে না, সেটার সঠিক ব্যবহারও খুব জরুরি। অনেকেই মনে করেন, শ্যাম্পু বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলেই বুঝি বেশি কাজ হবে, কিন্তু এটা একদম ভুল ধারণা!
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক পদ্ধতিতে শ্যাম্পু ব্যবহার করাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিন। তারপর হাতের তালুতে অল্প পরিমাণে শ্যাম্পু নিয়ে (চুলের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে) হালকাভাবে ফেনা তৈরি করুন। এবার আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন। মনে রাখবেন, নখ দিয়ে ঘষাঘষি করা যাবে না, এতে স্ক্যাল্পের ক্ষতি হতে পারে। ২-৩ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করার পর ঠান্ডা বা হালকা গরম জল দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন, যাতে শ্যাম্পুর কোনো অবশিষ্টাংশ চুলে লেগে না থাকে। সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু করাই যথেষ্ট, অতিরিক্ত শ্যাম্পু করলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই একটি ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন, এটি চুলকে নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া, চুল ধোয়ার পর জোরে জোরে ঘষে মুছবেন না, আলতো করে চাপ দিয়ে জল ঝরিয়ে নিন।
শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্প ম্যাসাজের গুরুত্ব
শ্যাম্পু করার সময় স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করাটা শুধু আরামদায়কই নয়, চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী। যখন আপনি আঙুলের ডগা দিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করেন, তখন রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এর ফলে চুলের ফলিকলগুলোতে বেশি অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায়, যা চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আমি যখন প্রথম স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা শুরু করলাম, তখন বুঝতেই পারিনি এর এত উপকারিতা। এখন শ্যাম্পু করার সময়টা আমার কাছে একটা রিল্যাক্সেশন সেশন মনে হয়।
সঠিক কন্ডিশনার নির্বাচন ও ব্যবহার
অনেকেই শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করার গুরুত্ব বোঝেন না, কিন্তু কন্ডিশনার চুলের জন্য খুবই জরুরি। শ্যাম্পু চুলের ময়লা পরিষ্কার করলেও, কন্ডিশনার চুলকে পুষ্টি জোগায়, আদ্রতা ধরে রাখে এবং চুলকে জটমুক্ত রাখে। অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পুর পাশাপাশি একটি ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুলের ভাঙন কমে এবং চুল নরম থাকে। কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় না লাগিয়ে শুধু চুলের দৈর্ঘ্য বরাবর লাগানো উচিত, এতে চুল ভারী হয় না।
আপনার দৈনন্দিন রুটিনে কিছু পরিবর্তন আনুন
শুধু ভালো শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই সব সমস্যা মিটে যাবে না। চুল পড়া কমাতে আপনার দৈনন্দিন জীবনে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন আনাও খুব জরুরি। আমি নিজে এই পরিবর্তনগুলো এনে খুবই উপকৃত হয়েছি। প্রথমত, সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। আপনার খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। ডিম, মাছ, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল এবং বাদাম চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য, কারণ ঘুমের সময় আমাদের শরীর মেরামতের কাজ করে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, যখন আমার ঘুম কম হতো, তখন শরীর যেমন ক্লান্ত লাগত, তেমনি চুল পড়ার পরিমাণও বেড়ে যেত। তৃতীয়ত, মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন। যোগা, মেডিটেশন বা আপনার পছন্দের কোনো শখের পেছনে সময় ব্যয় করুন। চতুর্থত, অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইলিং থেকে বিরত থাকুন। গরম হিট স্টাইলিং টুলস (যেমন হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেটনার) চুলের ক্ষতি করে। সম্ভব হলে চুল প্রাকৃতিকভাবে শুকাতে দিন। পঞ্চমত, নিয়মিত চুল ও স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখুন। পরিষ্কার স্ক্যাল্প চুলের ভালো বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের গুরুত্ব
চুল মূলত প্রোটিন দিয়ে গঠিত, তাই পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল এবং বাদাম অন্তর্ভুক্ত করুন। এছাড়াও, ভিটামিন সি, ই, বায়োটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। পর্যাপ্ত ঘুম শুধু আপনার শরীরকেই সতেজ রাখে না, বরং হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে, যা চুল পড়া রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আমার খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন এনেছি এবং নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলেছি, যা আমার চুল পড়া কমাতে সাহায্য করেছে।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও সঠিক হেয়ার কেয়ার

আধুনিক জীবনযাত্রায় স্ট্রেস এড়ানো কঠিন হলেও, এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম বা প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো যেতে পারে। এছাড়াও, চুলের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি। অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা বা অতিরিক্ত টাইট করে চুল বাঁধা চুলের গোড়ায় চাপ সৃষ্টি করে চুল পড়া বাড়াতে পারে। চুলের প্রতি একটু বাড়তি যত্ন নিলে এর স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে।
কিছু সাধারণ ভুল যা পুরুষরা চুল পড়ার ক্ষেত্রে করে থাকেন
পুরুষদের চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু অনেক সময় আমরা কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলি যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। আমার নিজেরও এমন অনেক ভুল ধারণা ছিল যা পরে আমি শুধরে নিয়েছি। প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ভুল হলো সমস্যাটাকে অবহেলা করা। চুল পড়া শুরু হলেই ভাবা যে এটা স্বাভাবিক বা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে – এই ধারণাটা ভুল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যাটা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। দ্বিতীয় ভুল হলো, যেকোনো শ্যাম্পু ব্যবহার করা। বাজারে অনেক শ্যাম্পু পাওয়া যায় যা হয়তো শুধু নামেই অ্যান্টি-হেয়ার ফল, কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ করে না। তাই শ্যাম্পু কেনার আগে তার উপাদানগুলো ভালোভাবে যাচাই করা দরকার। তৃতীয় ভুল হলো, অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইলিং করা। অতিরিক্ত জেল, স্প্রে বা হেয়ার ড্রায়ারের মতো গরম সরঞ্জাম ব্যবহার করলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং চুল বেশি পড়ে। চতুর্থত, চুল ভেজা অবস্থায় খুব জোরে আঁচড়ানো। ভেজা চুল নরম থাকে এবং এই অবস্থায় জোরে আঁচড়ালে চুল বেশি ছিঁড়ে যায়। পঞ্চমত, পর্যাপ্ত জল পান না করা। আমাদের শরীরের মতো চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও পর্যাপ্ত জল পান করা অত্যন্ত জরুরি। ডিহাইড্রেশন চুলের স্বাস্থ্যকে খারাপ করে দিতে পারে। এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চললে চুল পড়ার সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
চুল পড়া নিয়ে অবহেলা এবং ভুল শ্যাম্পু নির্বাচন
অনেক পুরুষই প্রথমে চুল পড়াকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না, ভাবেন হয়তো এটা সাময়িক। কিন্তু যখন সমস্যাটা গুরুতর আকার ধারণ করে, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে চুল পড়ার হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়াও, ভুল শ্যাম্পু ব্যবহার করা একটি বড় ভুল। বিজ্ঞাপনে দেখে বা বন্ধুর পরামর্শে কোনো যাচাই না করেই শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ফল নাও পেতে পারেন। আমি নিজেও প্রথমে এই ভুলটা করেছিলাম, যার কারণে কোনো উপকার পাইনি, বরং চুল পড়ার হার আরও বেড়েছিল।
অতিরিক্ত স্টাইলিং এবং ভেজা চুলের যত্ন
আজকাল পুরুষদের মধ্যেও হেয়ার স্টাইলিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং বা কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার চুলের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। চুলকে সুস্থ রাখতে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক উপায়ে রাখুন। আরেকটি ভুল হলো ভেজা চুল নিয়ে তাড়াহুড়ো করা। ভেজা চুল সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে, তাই এই সময় আলতো হাতে আঁচড়ানো উচিত এবং চুল শুকাতে সময় দিতে হবে।
চুল পড়া কমানোর শ্যাম্পুগুলোর কিছু পরিচিত উপাদান
আমরা যখন পুরুষদের অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু নিয়ে কথা বলি, তখন এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলো নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। কারণ, এই উপাদানগুলোই আসলে নির্ধারণ করে কোন শ্যাম্পু কতটা কার্যকর হবে। আমি নিজে বিভিন্ন শ্যাম্পুর উপাদান তালিকা দেখে গবেষণা করে জেনেছি কোন উপাদানগুলো আসলে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো যা আপনাকে সঠিক শ্যাম্পু চিনতে সাহায্য করবে:
| উপাদানের নাম | কার্যকারিতা | কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ |
|---|---|---|
| ক্যাফেইন (Caffeine) | রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, ফলিকল উদ্দীপিত করে। | চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ বাড়ায়, চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। |
| বায়োটিন (Biotin) | চুল মজবুত করে, কেরাটিনের উৎপাদন বাড়ায়। | চুলের ভাঙন রোধ করে এবং চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। |
| স পামেট্টো (Saw Palmetto) | DHT হরমোনের উৎপাদন কমায়। | হরমোনজনিত চুল পড়া প্রতিরোধে সহায়ক, বিশেষ করে পুরুষদের টাক পড়ার ক্ষেত্রে। |
| কেটোকোনাজল (Ketoconazole) | স্ক্যাল্পের প্রদাহ ও ফাঙ্গাস কমায়। | খুশকি ও স্ক্যাল্পের অন্যান্য সমস্যা দূর করে চুল পড়া কমায়। |
| জিঙ্ক পাইরিথিওন (Zinc Pyrithione) | অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। | স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং খুশকি নিয়ন্ত্রণ করে। |
| নিয়াসিনামাইড (Niacinamide) | স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্য উন্নত করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। | চুলের ফলিকলকে শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। |
এই উপাদানগুলো চুলের ফলিকলকে সরাসরি পুষ্টি দেয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ক্ষতিকর হরমোনের প্রভাব কমায়। যখন আপনি কোনো শ্যাম্পুর উপাদান তালিকায় এই ধরনের কার্যকর উপাদান দেখতে পাবেন, তখন বুঝবেন যে এটি চুল পড়া কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। তবে, একটি শ্যাম্পুতে সব উপাদান থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই, কিছু নির্দিষ্ট উপাদানের সঠিক সংমিশ্রণও দারুণ কাজ করতে পারে।
ক্যাফেইন এবং বায়োটিন: চুলের শক্তি বৃদ্ধি
ক্যাফেইন শুধু আপনাকে সতেজ রাখতেই সাহায্য করে না, এটি আপনার চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে। আমার নিজেরও প্রথম দিকে সন্দেহ ছিল, কিন্তু পরে দেখেছি ক্যাফেইন সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমার চুল আরও প্রাণবন্ত ও মজবুত মনে হয়েছে। বায়োটিন, যা ভিটামিন বি৭ নামেও পরিচিত, চুলের অন্যতম প্রধান উপাদান কেরাটিনের উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি চুলের গঠনকে শক্তিশালী করে এবং ভাঙন রোধ করে, যার ফলে চুল ঘন দেখায়।
স পামেট্টো এবং কেটোকোনাজল: হরমোন ও স্ক্যাল্পের যত্নে
পুরুষদের চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো DHT হরমোনের অতিরিক্ত প্রভাব। স পামেট্টো এই DHT হরমোনের উৎপাদনকে বাধা দিয়ে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। আমার অনেক বন্ধু এই উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছে। অন্যদিকে, কেটোকোনাজল একটি অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা খুশকি এবং স্ক্যাল্পের অন্যান্য প্রদাহ কমাতে দারুণ কার্যকর। স্বাস্থ্যকর স্ক্যাল্প মানেই সুস্থ চুল, তাই স্ক্যাল্পের যেকোনো সমস্যা থাকলে কেটোকোনাজলযুক্ত শ্যাম্পু খুবই উপকারী হতে পারে।
পুরুষদের চুল পড়া কমানোর শ্যাম্পু: কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
পুরুষদের জন্য অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু কেনার সময় শুধু ব্র্যান্ডের নাম দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লে হবে না, কিছু জরুরি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। এই বিষয়গুলো আপনাকে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত শ্যাম্পুটা বেছে নিতে সাহায্য করবে। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, তাড়াহুড়ো করে শ্যাম্পু কিনলে অনেক সময় ভুল প্রোডাক্ট কেনা হয়ে যায়। প্রথমত, আপনার চুল পড়ার কারণটা আগে বোঝার চেষ্টা করুন। এটা কি বংশগত, নাকি স্ট্রেস, দূষণ বা খাদ্যাভ্যাসের কারণে হচ্ছে?
কারণের উপর নির্ভর করে সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন করা সহজ হয়। দ্বিতীয়ত, শ্যাম্পুর উপাদান তালিকা ভালো করে পড়ুন। আগেই বলেছি, ক্যাফেইন, বায়োটিন, স পামেট্টো, কেটোকোনাজল – এই ধরনের উপাদানগুলো কার্যকর। ক্ষতিকারক কেমিক্যাল যেমন সালফেট, প্যারাবেন বা সিলিকনমুক্ত শ্যাম্পু বেছে নেওয়া উচিত, কারণ এগুলো দীর্ঘমেয়াদে চুলের ক্ষতি করতে পারে। তৃতীয়ত, শ্যাম্পুর রিভিউ ও রেটিং দেখুন। অন্য ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা থেকে আপনি শ্যাম্পুটির কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সবার অভিজ্ঞতা একরকম নাও হতে পারে। চতুর্থত, বাজেট। সব ভালো শ্যাম্পুই যে খুব দামি হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনার বাজেটের মধ্যে ভালো মানের শ্যাম্পু খুঁজে বের করা সম্ভব। পঞ্চমত, ধৈর্যের সাথে ব্যবহার করুন। যেকোনো অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পুর কার্যকারিতা দেখতে অন্তত ২-৩ মাস সময় লাগে। তাই একবার ব্যবহার করেই হতাশ হয়ে যাওয়া চলবে না। নিয়মিত ব্যবহার এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে ভালো ফল আশা করা যায়।
উপাদান পরীক্ষা: ক্ষতিকারক কেমিক্যাল বর্জন
আজকাল অনেক শ্যাম্পুতেই সালফেট, প্যারাবেন, সিলিকন এবং সিন্থেটিক সুগন্ধির মতো ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এই কেমিক্যালগুলো সাময়িকভাবে চুলকে উজ্জ্বল দেখালেও, দীর্ঘমেয়াদে চুলের গোড়া দুর্বল করে এবং স্ক্যাল্পের ক্ষতি করে। আমি সবসময় চেষ্টা করি সালফেট-ফ্রি এবং প্যারাবেন-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে, কারণ আমার মনে হয়েছে এগুলো চুলের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদে চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শ্যাম্পু কেনার সময় অবশ্যই উপাদান তালিকাটি মনোযোগ দিয়ে দেখুন।
পর্যালোচনা এবং ধৈর্যের সাথে ব্যবহার
নতুন কোনো শ্যাম্পু কেনার আগে অনলাইন রিভিউগুলো দেখে নেওয়া একটি ভালো অভ্যাস। অন্য ব্যবহারকারীরা কী বলছেন, শ্যাম্পুটির সুবিধা-অসুবিধা কী – এসব জেনে নিলে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। তবে মনে রাখবেন, যেকোনো শ্যাম্পুই ম্যাজিকের মতো কাজ করে না। চুল পড়ার সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন ধৈর্য এবং নিয়মিত ব্যবহার। আমি যখন প্রথম একটি নতুন শ্যাম্পু ব্যবহার করা শুরু করেছিলাম, তখন ভেবেছিলাম হয়তো এক মাসের মধ্যেই ফল পাবো, কিন্তু আসল পরিবর্তনটা দেখতে আমার প্রায় তিন মাস লেগেছিল। তাই হতাশ না হয়ে নিয়মিত ব্যবহার করাটা খুব জরুরি।
লেখাটি শেষ করছি
এতক্ষণ ধরে পুরুষদের চুল পড়ার কারণ, সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন এবং দৈনন্দিন যত্নের নানান দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করি, আমার এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া তথ্যগুলো আপনাদের উপকারে আসবে। সত্যি বলতে, চুল পড়ার সমস্যাটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক দিক থেকেও অনেক প্রভাব ফেলে। নিজেকে আয়নায় দেখে যখন মনে হয় চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে, তখন একটা অস্থিরতা কাজ করে। কিন্তু সঠিক তথ্য আর একটু যত্ন নিলেই এই সমস্যাটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। হতাশ না হয়ে ধৈর্যের সাথে এগিয়ে যান, আর মনে রাখবেন, প্রতিটি চুলের কণার যত্ন আপনার হাতেই।
আমি নিজে দেখেছি, শুধু শ্যাম্পু বদলে দিলেই যে রাতারাতি চুল গজিয়ে যাবে, ব্যাপারটা তেমন নয়। এর জন্য চাই জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর মানসিক চাপ কমানো। এই পুরো প্রক্রিয়াটা একটা যাত্রার মতো, যেখানে আপনাকে প্রতিনিয়ত নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। আপনার চুল আপনার আত্মবিশ্বাসের একটা বড় অংশ, তাই এর যত্নে কোনো রকম আপস করা চলবে না। বিশ্বাস করুন, একটু চেষ্টা করলেই আপনার চুল আবার ঝলমলে আর মজবুত হয়ে উঠবে।
আমাদের জীবন তো এমনই, যেখানে ছোট ছোট পরিবর্তনই বড় ফলাফল নিয়ে আসে। এই ব্লগ পোস্টটি যদি আপনাদের চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে একটুও সাহায্য করে, তাহলে আমার এই প্রচেষ্টা সার্থক হবে। আপনাদের যেকোনো প্রশ্ন বা অভিজ্ঞতা নিচে মন্তব্য করে জানাতে ভুলবেন না। আমি সবসময় আপনাদের পাশে আছি আপনাদের চুল সুস্থ ও সুন্দর রাখার এই যাত্রায়!
জেনে নিন কিছু দরকারি টিপস
১. নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করুন: শ্যাম্পু করার সময় বা তেল লাগানোর সময় আলতো হাতে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা চুলের ফলিকলকে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে এবং চুল মজবুত করে। এটি আপনার চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আপনাকে মানসিক আরামও দেবে, যা পরোক্ষভাবে চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
২. সুষম খাবার গ্রহণ করুন: আপনার খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। বিশেষ করে ডিম, মাছ, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল এবং বাদাম চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমি যখন আমার খাবারে এই জিনিসগুলো যোগ করলাম, তখন দেখলাম আমার চুল আগের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ও ঘন হয়ে উঠেছে।
৩. পর্যাপ্ত জল পান করুন: শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত জল পান করা অপরিহার্য, আর চুলের স্বাস্থ্যও এর ব্যতিক্রম নয়। জল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং চুলের কোষগুলোকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করা উচিত।
৪. স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন: আধুনিক জীবনে স্ট্রেস আমাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এই মানসিক চাপ চুলের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। যোগা, মেডিটেশন, হালকা ব্যায়াম বা আপনার পছন্দের কোনো শখের পেছনে সময় ব্যয় করে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন। স্ট্রেস কমলে চুল পড়ার হারও অনেকটাই কমে আসে।
৫. অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইলিং পরিহার করুন: হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেটনার বা কেমিক্যালযুক্ত হেয়ার প্রোডাক্টের অতিরিক্ত ব্যবহার চুলের গোড়া দুর্বল করে দেয়। চুলকে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিকভাবে শুকাতে দিন এবং ক্ষতিকারক কেমিক্যাল থেকে দূরে থাকুন। আমি নিজে দেখেছি, যখন থেকে আমি হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার কমিয়েছি, তখন থেকেই আমার চুল অনেক স্বাস্থ্যবান হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় 정리
চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে বহু কারণ লুকিয়ে থাকে, যেমন পরিবেশ দূষণ, খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম, মানসিক চাপ, বংশগত প্রভাব এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। সঠিক সমাধান পেতে হলে এর কারণ চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। শ্যাম্পু নির্বাচনের ক্ষেত্রে এর উপাদান তালিকা খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করুন; ক্যাফেইন, বায়োটিন, স পামেট্টো এবং কেটোকোনাজলের মতো উপাদান চুল পড়া কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ক্ষতিকারক সালফেট ও প্যারাবেনমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। শুধু শ্যাম্পু নয়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এবং চুলের সঠিক যত্নও চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোনো নতুন শ্যাম্পুর কার্যকারিতা দেখতে অন্তত ২-৩ মাস ধৈর্য ধরে ব্যবহার করা প্রয়োজন। মনে রাখবেন, চুলের যত্ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যার জন্য প্রয়োজন আপনার নিয়মিত মনোযোগ ও সঠিক পদক্ষেপ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: চুল পড়া কমানোর শ্যাম্পুগুলো কি সত্যিই কাজ করে? আর ফলাফল পেতে ঠিক কতদিন সময় লাগে?
উ: আরে বন্ধু, এই প্রশ্নটা আমার নিজের মনেও বহুবার এসেছে! যখন চুল পড়া শুরু হয়, তখন মনে হয় কিচ্ছুতে কাজ হবে না। কিন্তু আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, হ্যাঁ, ভালো মানের অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পুগুলো সত্যিই কাজ করে। তবে রাতারাতি ম্যাজিক হবে এমনটা ভাবলে চলবে না। এগুলো চুলের গোড়া মজবুত করে, মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে আর চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগায় যাতে চুল পড়া কমে। আমি নিজে ব্যবহার করে দেখেছি, যদি নিয়মিত এবং সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়, তাহলে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে কিন্তু একটা স্পষ্ট পার্থক্য চোখে পড়ে। প্রথমে চুল পড়া কমতে শুরু করে, তারপর ধীরে ধীরে নতুন ছোট ছোট চুল গজাতে দেখা যায়। তাই ধৈর্য ধরে ব্যবহার করাটা ভীষণ জরুরি!
প্র: ভালো অ্যান্টি-হেয়ার ফল শ্যাম্পু কিনতে গেলে আমরা কোন উপাদানগুলো বিশেষভাবে দেখব, আর কোনগুলো এড়িয়ে চলব?
উ: দারুণ প্রশ্ন! আসলে আজকাল এত শ্যাম্পু বাজারে আছে যে কোনটা রেখে কোনটা কিনব তা বোঝা মুশকিল। তবে আমার নিজের বাছাই করার কিছু নিয়ম আছে। শ্যাম্পু কেনার সময় বায়োটিন (Biotin), ক্যাফেইন (Caffeine), স প্যালেটো (Saw Palmetto) এবং কেটোকোনাজল (Ketoconazole) এর মতো উপাদানগুলো আছে কিনা দেখে নেবেন। এগুলো চুলের গোড়া মজবুত করতে, রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে যা চুল পড়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে, সালফেট (Sulphates) এবং প্যারাবেন (Parabens) যুক্ত শ্যাম্পুগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। সালফেট চুলকে শুষ্ক করে দেয় এবং প্যারাবেন চুলের ক্ষতি করতে পারে। আমি নিজে সব সময় চেষ্টা করি প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর, যেমন অ্যালোভেরা, পেঁয়াজের রস বা চা গাছের তেল আছে এমন শ্যাম্পু বেছে নিতে। মনে রাখবেন, ভালো উপাদান আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদের মতো কাজ করবে!
প্র: শুধুমাত্র শ্যাম্পু ব্যবহার করলেই কি চুল পড়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে, নাকি এর সাথে আরও কিছু করার দরকার আছে?
উ: বন্ধু, শুধু শ্যাম্পু করলেই যে আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা কিন্তু নয়। শ্যাম্পু চুল পড়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কিন্তু এটা সামগ্রিক যত্নের একটা দিক মাত্র। আমি নিজে চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে শুধু শ্যাম্পুর ওপর নির্ভর করিনি, একটা সম্পূর্ণ রুটিন মেনে চলেছি। যেমন, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ভীষণ জরুরি। আপনার খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ যেমন আয়রন, জিঙ্ক অবশ্যই রাখবেন। পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ কমাতেও চেষ্টা করতে হবে, কারণ স্ট্রেস কিন্তু চুল পড়ার একটা বড় কারণ। আমি দেখেছি, নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করলে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং চুল মজবুত থাকে। এছাড়াও, চুলকে বেশি হিট দেওয়া, শক্ত করে বাঁধা বা রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট করানো থেকে বিরত থাকুন। এই সবকিছু একসঙ্গে মেনে চললে তবেই কিন্তু চুল পড়ার সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।






